ইরাক, ২০০৯। পৃথিবীর জটিলতম যুদ্ধ। আমেরিকান মেরিন ঘাঁটি গেড়েছে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায়, সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রেস কোর। ডজন খানেক রিপোর্টারের মধ্যে নিউ ইয়র্কের উদীয়মান তারকা তেজস্বিনী রায়। তেজী বলেই কমান্ডার লুকের শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে যুদ্ধের আসল খবর খুঁজে বেড়াচ্ছে বাদামি চামড়ার ইন্ডিয়ান-আমেরিকান মেয়ে, আর এই নিয়েই নিত্যনৈমিত্তিক সংঘাত। ল্যান্ডমাইনে ঘায়েল সৈন্যদের রিপোর্ট পেশ করে আর্মি ক্যাম্প থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছে পর্যন্ত, তবুও হাল ছাড়েনি তেজো। এদিকে অ্যারাবিয়ার বধ্যভূমিতে পৌঁছেছে আরেক আগন্তুক—সুন্দরবন থেকে পাচার হওয়া শবনম। কচি বয়সে চাকরির লোভ দেখিয়ে কাজের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল ওকে—হরিয়ানার ব্রথেলে, সেখান থেকে দুবাইয়ের নাইটক্লাব, শেষমেশ ভয়ংকর এক মানুষ কেনাবেচার বাজারে। বহু তঞ্চকতার শিকার, এখন ও যুদ্ধের পণ্য, মেরিন ক্যাম্পের বেলিডান্সার, আশ্রয় বলতে পাতানো বেদুইন মা ওফরা। অদ্ভুত এক সম্পর্কের জালে জড়িয়ে পড়ে ক্রীতদাসী এবং সাংবাদিক। কিসের আদল ধরা পড়েছে ওই নর্তকীর মুখশ্রীতে? বিস্মৃত অতীত বর্তমানের দরজায় ঘা দিয়ে রিপোর্টার তেজোকে জাগিয়ে রাখছে রাতের পর রাত, এই নির্মম পৃথিবীতে ও-ই কি শবনমের একমাত্র আপনজন? ওকে বাঁচাতে হলে কেবলমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে রইলে চলবে না, স্মৃতির অদৃশ্য সীমারেখা অতিক্রম করে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে হবে। সুন্দরবনের ঢেউ মরুভূমি ভাসিয়ে দিলে তবেই কি পরিত্রাণ পাবে তেজস্বিনী আর শবনম?

উৎসর্গ: আজলাই কে

বাংলা উপন্যাসটি কিনতে হলে:

Tejasvini o Sabanama by কুণাল বসু

Find links to buy Tejasvini o Sabanama by কুণাল বসু on IndieBound, Bookshop.org, Amazon, in your local library, Kindle Store, Libre.fm, and many more stores.

boook.link

ইংরিজি অনুবাদ (The Endgame) কিনতে হলে:

The Endgame by Kunal Basu

Find links to buy The Endgame by Kunal Basu on IndieBound, Bookshop.org, Amazon, in your local library, Kindle Store, Libre.fm, and many more stores.

boook.link

সূচিপত্র

এক

মাঝরাতে অকারণে ঘুম ভাঙানোর কেউ নেই বলেই, ফোনটাকে চুপ করিয়ে রাখার প্রয়োজন হয় না তেজস্বিনীর। রিং বাজলে বুঝতে হবে ডাক এসেছে। গড়িমসির দোহাই দিয়ে বিছানা আঁকড়ে থাকার প্রশ্নই নেই, তৎক্ষণাৎ শুরু হয়ে যাবে যাবতীয় কার্যকলাপ। হাতে এক ঘণ্টা সময় থাকলে স্নান, নয়তো রাতের পাতলুন ছেড়ে সরাসরি কাজের পোশাক। ব্যাগটা গুছিয়ে রাখা অনেকদিনের স্বভাব, যার মধ্যে সপ্তাহ-দুয়েকের কাপড়জামা আর মশার ক্রিম, ফ্লাস্ক, টর্চ, ব্যাটারি চার্জর বা টুকিটাকি ওষুধপত্র ছাড়াও একটা ছোট মেকআপ কিট অত্যন্ত আবশ্যিক, কারণ প্রেক্ষাপট যতই মলিন হোক, রিপোর্টারের উজ্জ্বল মুখশ্রী দেখতেই অভস্থ টিভি-র দর্শক।

tejo.scrollstack.com

দুই

২০০৬-এর তিরিশে ডিসেম্বর ভোর ছ’টায় মনুষ্যজাতির বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় সাদ্দাম হুসেনকে। পবিত্র ঈদ আল-আধার প্রথম আজান তখন সবেমাত্র থেমেছে। ঘুম ভাঙিয়ে তাঁকে খেতে দেওয়া হয়েছিল মুরগির মাংস আর ভাত। সঙ্গে ঈষৎউষ্ণ মধু। কোরান হাতে আবৃত্তি করছিলেন ইসলামের প্রথম শাহাদাত... লা ইলাহা ইল্লা লাহ, যখন দড়িটা তাঁর গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়। “এবার জাহান্নামে যাও!” চেঁচিয়ে উঠেছিল কেউ একজন। “আল্লাহ-র জাহান্নাম তোমাদের ইরাকের জাহান্নামের চেয়ে শতগুণ কাম্য,” আবৃত্তি থামিয়ে উত্তর দেন সাদ্দাম। পুরো ঘটনাটা নিজের মোবাইল ফোনে ধরে রেখেছিল এক সান্ত্রি, পরে যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে নাকি মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশ, মৃত্যুদণ্ড-কে পরিহাসে পরিণত করার জন্য। অন্তিম মুহূর্তে শত্রুকে লাঞ্ছনা না করে সন্মান জানানোই সভ্যতার নিদর্শন।

tejo.scrollstack.com

তিন

নিমরুদের কাছাকাছিই ওদের ক্যাম্প। ধূলিসাৎ শহরের সীমানার বাইরে গ্রাম সংলগ্ন যে মরূদ্যান, তারই ভেতর। দুরবিনে চোখ রাখলে দেখা যাবে সারবদ্ধ খেজুর গাছ, বালির সঙ্গে মিশে থাকা মাটির বাড়ি আর ক্রমাগত বোমাবর্ষণের পরেও অক্ষত মসজিদের মিনার। যুদ্ধের আগে ইরাক দেশটা নাকি এইরকমই ছিল। বিশাল মরুভূমির আশ্রয়ে গুটিকয়েক মনুষ্যপ্রাণী। বাইবেলে পড়া সারল্যময় জীবন। দুই মহান নদী ইউফ্রেটিস আর টাইগ্রিসের মধ্যবর্তী এই সেই রূপকথার মেসোপটেমিয়া যেখানে আদ্যিকালে গড়ে ওঠে সুমেরিয়ান সভ্যতা। গাড়ির চাকা থেকে শুরু করে বর্ণলিপি, গনিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, ও কৃষির জন্ম এখানেই, ঐতিহাসিকদের তাই বিশ্বাস। খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০-৫৩৯ একটানা রাজত্বের পর ব্যাবিলনের পতন, তারও দুশো বছর পর অ্যালেক্সজাণ্ডারের আবির্ভাব। ক্রমশ হাতবদলের পালায় গ্রিকদের হারিয়ে রোমান, তারপর পারথিয়ান, সাসানিয়ান, অবশেষে সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামের দখলে চলে আসে আজকের ইরাক।

tejo.scrollstack.com

চার

রিপোর্টারর্স মেসে ঢুকতেই তেজোকে জড়িয়ে ধরে জিসেল। “এই যে সুন্দরী, তোমাকেই খুঁজছিলাম আমি!” জাতীয় মন্তব্য করে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় বার-এর দিকে। ওখানেই জটলা করছে সবাই, অনেকেই তেজোর পরিচিত, নামী এবং উঠতি সাংবাদিকের ভিড়। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হলে মদের কার্পণ্য হবে না, এ কথা সর্বজনবিদিত। দামী স্কচ থাকবেই, জিন, ভদকা, রাম, ইউরোপিয়ানদের পছন্দ নানা ধরনের ওয়াইন, আমেরিকানদের জন্য বিয়ার। খেজুর দিয়ে তৈরি আরক-ও থাকবে, চাইলে যাতে বিদেশিরা আরেবিয়ার স্বাদ পেতে পারে। মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ হলেও, ক্রিশ্চানরা যথেচ্ছ মদ আমদানি করতে পারে ইরাকে। ক্রেতার মধ্যে অন্যতম সেনাবাহিনী। যুদ্ধক্ষেত্রে খাদ্যের অভাব হলেও হতে পারে, কিন্তু মদ পাওয়া যাবেই। এই অদ্ভুত ব্যাপারটা নিয়ে একবার স্টোরি বানাতে চেয়েছিল তেজো, হেসে উড়িয়ে দেন ওর বস। 

tejo.scrollstack.com

পাঁচ

প্রথম রাতে ঘুম আসতে চায় না। শরীর এবং মন দুই-ই সতর্ক, বড় বেশি সজাগ। বলা যায়, এটাই ওর রুটিন। অপরিচিত পরিবেশে যে কোনও সংকেতই ওর কাছে অর্থবহ। টেন্টের ক্যানভাস ঢাকনির ওপর হাওয়ার ঝাপট মনে করিয়ে দেয় এটা যুদ্ধক্ষেত্র, নিউ ইয়র্কের ফ্ল্যাট ছেড়ে অনেক দূর এসে পড়েছে তেজো। আলো চাইলে সম্বল টর্চ, মেঝে বলতে বালির ওপর প্ল্যাস্টিকের আস্তরণ। শোবার আগে হাতের কাছে সব কিছু রাখা চাই, পায়ের বুট থেকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, যাতে মাঝরাতে সাইরেন বাজলে এক নিমেষে বেরিয়ে পড়া যায়। শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাবার জরুরি পদক্ষেপগুলো ঝালিয়ে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। 

tejo.scrollstack.com

ছয়

“ওদের মতে ৯-ই এপ্রিল ২০০৩-এই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। মানে যেদিন দুপুরে সাদ্দামের মূর্তি বাগদাদের ফিরদউস স্কোয়ার থেকে উপড়ে ফেলা হয়। বলা যায় সেদিন থেকেই আমেরিকান আর্মি বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।” 

tejo.scrollstack.com

সাত

মেরিনদের সঙ্গে ব্র্যাডলি চড়ে যুদ্ধে যায়নি যে সাংবাদিক, সে বুঝবেই না কী ভীষণ ক্লান্তিকর এই যাত্রা। ব্র্যাডলি মানে আরমার্ড কার, অর্থাৎ ছোটখাটো ট্যাংক। দম আটকানো গরম, বাতাশহীন অন্ধকূপের মধ্যে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। ঘাড়ের ওপর জনা পাঁচেক ঘেমো, চুইং গাম চেবানো, থুতু ফেলা মেরিন। জানলা বলতে গুটিকতক তিন ইঞ্চি বাই ছ’ইঞ্চি ঘুলঘুলি, যার ভেতর দিয়ে পৃথিবীটাকে চিনে ওঠা প্রায় অসম্ভব। ওয়াকি-টকি শুনে আন্দাজ করে নিতে হবে ওদের যাত্রা ঠিক কোনদিকে - উত্তরের শহরাঞ্চল নাকি পশ্চিমের তেলের খনি।

tejo.scrollstack.com

আট

“কাল রাত্তিরে কটা ছবি তুলেছিলে? কোথায় সেগুলো?” 

tejo.scrollstack.com

নয়

মনোমত স্টাইলের জুতো পাওয়া যাচ্ছে না, কিংবা পাওয়া গেলেও ঠিক সাইজ মিলছে না বলেই খান সাতেক দোকানে ঢুঁ মেরেছে তেজো। এছাড়া আর কিই বা করার আছে কুয়েটে? এক আধটা না, তেরোটা মল যে শহরে সেখানে ধর্মকে কলা দেখিয়ে শপিং-ই যে মানুষের আফিম হয়ে উঠবে তাতে আশ্চর্য কী? শুধু জুতো নয়, আরও অনেক ডাকসাইটে ব্র্যান্ডের নামজাদা দোকানেও ঘোরাফেরা করেছে, কেনাকাটি করবে বলে না, সময় কাটাবে বলে। যেমন র‍্যালফ লোরেন, গুচি, স্যানেল, হারমিস। হাই ফ্যাশানের জামাকাপড়, ভ্যানিটি ব্যাগ, ঘড়ি, আর থরে থরে সাজানো মেক আপের সামগ্রীর সামনে ভাবুক মুখ করে দাঁড়িয়ে থেকেছে বেশ কিছুক্ষণ। হাসিমুখে এগিয়ে এসেছে সেলসগার্ল, ওর পছন্দের জিনিস বেছে নিতে সাহায্য করবে বলে। পুদিনা পাতার সুগন্ধি চা অফার করেছে। এখুনি কিনলে মোটা ডিসকাউন্টের লোভও দেখিয়েছে। 

tejo.scrollstack.com

দশ

মরুভূমির ঝড়ে আটকে পড়েছে তেজো। কুয়েট ছেড়ে ইরাকের বর্ডার পার করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। এ অঞ্চলে এই ঝড়ের নাম হাবুব। গাড়িতে উঠেই গুইগাই করছিল মাসুদ, ওর ড্রাইভার। ঝড় ওঠবার খবর আগেভাগে জেনে গিয়েছিল বলেই, তেজোকে যাত্রার দিন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সাধাসাধি করছিল। দিন দুয়েক বাদে মরুভূমি বেড়াতে গেলে কেমন হয়? এর মধ্যে প্লেনে চড়ে দুবাই ঘুরে এলে মন্দ কী? কুয়েটের চেয়েও ঢের ভাল শপিং ওখানে, খাওয়াদাওয়াও। .

tejo.scrollstack.com

এগারো

আলফা কম্পানির সঙ্গে দিনকতক কাটিয়েই হাঁপিয়ে ওঠে তেজো। যতক্ষণ অ্যাকশন ততক্ষণ মেরিনদের মতো ব্যাস্ত রিপোর্টাররাও। নইলে মরুভূমির ভেতর ক্যাম্পে আটক বোরিং জীবন। মজা পেতে হলে মেসে গিয়ে মদ গেলা নয়তো ব্রিজ খেলা। বড়জোর কে কবে মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিল সেই নিয়ে আষাঢ়ে গল্প। বয়স কম যাদের তারা একত্র হলে জুয়ার আসর বসবে। কার টিম এই মরসুমে চাম্পিয়ান হবে থেকে শুরু করে কে ইরাক থেকে বেঁচে ফিরবে আর কেই বা এখানেই দেহ রাখবে জাতীয় যতসব আজেবাজে বেট। .

tejo.scrollstack.com

বারো

নিমরুদের লাগোয়া গ্রামে আমেরের পৈত্রিক বাড়ি। উট বেচাকেনার নামকরা মেলা বসতো এখানেই। এখন লাগাতার বোমাবর্ষণে সেই মেলার মাঠে খানাখন্ধ। গুটিকতক পরিবার এখনও মাটি কামড়ে পড়ে আছে, আয় বলতে মেরিন ক্যাম্পের ব্যাগার খাটা আর কিচেনের আনাজপাতি সাপ্লাই। বেশকিছু বর্গমাইলের মধ্যে এটাই ইরাকিদের একমাত্র বাসস্থান, ক্যাম্পের নর্তকী কাঁটাতারের বাইরে থাকলে থাকবে এখানেই।   .

tejo.scrollstack.com

তেরো

“আগে ভাবতাম মাথা গরম, এখন দেখছি মাথা খারাপ! কাণ্ডজ্ঞান হারিয়েছ এক্কেবারে,” উত্তেজনায় হাত পা কাঁপে চার্লির। “রাতদুপুরে নিমরুদে ঢোকে কেউ? ওখানে কম করে ছ-সাতশো ল্যান্ডমাইন পুতে রেখে গেছে সাদ্দাম বাহিনী। এমনিতেই এ দেশটায় পুরোপুরি সেফ নয় কেউই, তার ওপর মসুল, নাজাফ, নিমরুদ, ফালুজা দুশো পারসেন্ট আনসেফ।” .

tejo.scrollstack.com

চোদ্দ

কমান্ডার লুকের অফিস থেকে বেরতেই তেজোর মুখোমুখি হয় শেখ আব্বাস। মুখে সেই স্বভাবসুলভ হাসি, আর স্যালুট। অতিপরিচিত বন্ধুর মতো উচ্ছ্বাস দেখিয়ে মেস অবধি ধাওয়া করে আসায় ঠাণ্ডা পানীয় সহ সামান্য বাতচিতে বাধ্য হয় তেজো। .

tejo.scrollstack.com

পনেরো

ভেঙে চুরমার ব্যারাকের গেটের সামনেই দাউ দাউ করে জ্বলছিল গাড়িটা। আরেকটু এগোলেই ক্যান্টিন। মানে দু’শো গজের মধ্যে কয়েকশো মেরিনের প্রাণ। গাড়ির বোমা সময়মত ফাটাতে পারলে শুধু দেদার সৈন্য মারা যেত তাই না, অস্ত্রের ভাঁড়ারে আগুণ লেগে গোটা ক্যাম্পটাই একটা আগ্নেয়গিরির আকার নিত। তিন তিনটে চেকপোস্ট টপকে কী করে এত কাছাকাছি এসে পড়েছিল ওটা সেই নিয়েই সারাদিন তুমুল জল্পনাকল্পনায় ব্যাস্ত থাকায় তেজো আর লরেনজোর অনুপস্থিতি খেয়াল করেনি কেউই।.

tejo.scrollstack.com

ষোল

দূরত্বের বিচারে টার্কির বর্ডারই সবচেয়ে কাছে। কিন্তু পথে জাব-আল-কাবির। কুর্দি পেশমেরগা যোদ্ধারা ওই নদীর দু’ধারে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, মোটা টাকার বিনিময়ে ইরাকি রিফিউজিদের পালাবার রাস্তা খুলে দিচ্ছে। নবীন ইরাক রাষ্ট্রের বিরোধী এবং আমেরিকার বন্ধু হলেও, ওদেরকে বিশ্বাস করা সমীচীন হবে না। টার্কির সীমানায় ছোটখাটো সংঘর্ষ লেগেই আছে, গুপ্তচর সন্দেহে বাদামি চামড়ার দুই মেয়েকে আটক করতেই পারে কুর্দ বাহিনী। ভালোয়-ভালোয় বর্ডার পার করলেও, রাজধানী আঙ্কারা পৌঁছতে সময় ও সম্বল দু’ই প্রয়োজন, প্রেসের লোক বলে জোর খাটাতে পারবে না তেজো।.

tejo.scrollstack.com

সতেরো

পুরনো স্কুল বাসের পঁয়ত্রিশটা সিটই ভর্তি। খালেদের অনুরোধে দুই বাচ্চাকে কোলে তুলে নেয় বাপমা, ফাঁকা সিটে বসে পড়ে তেজো আর শবনম। কালো আবায়ায় সর্বাঙ্গ ঢাকা, তাই ওদের বিদেশি বলে চিনতে পারেনি কেউই। শবনমের সাথে আরবিতে দু’এক কথায় সহজ হয়ে যায় সদ্য সন্তানের জন্ম দেওয়া ইয়াজিদি মহিলা। ওরা বহু দূর থেকে আসছে, ঐতিহাসিক নিনেভ জেলার সিঞ্জর শহরে ওদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা, নিজের আর দুই মেয়ের প্রাণ নিয়ে পালাচ্ছে বছর তিরিশেকের গুল আর ওর স্বামী তইমুর। ওরা দু’জনেই উচ্চশিক্ষিত। সুফিদের সঙ্গে হাবভাবে মিল বলেই ইয়াজিদিদের ওপর জঙ্গিদের আক্রোশ, পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ ছেলেদের মেরে ফেলা হচ্ছে আর মেয়েদের ধর্ষণ। যদিও মুসলিম, ক্রিশ্চান, ইহুদি আর পার্সিদের ধর্ম মিলেজুলেই ওদের ধর্ম, যার প্রধান আরাধ্য ময়ূর সদৃশ স্বর্গের ফেরেশতা।.

tejo.scrollstack.com

আঠেরো

দেখতে কায়রো বা দামাস্কাসের মতো পুরনো না হলেও, প্রাচীন আরেবিয়ার মতোই ঘিঞ্জি আর নোংরা বাগদাদের আল-রিসাফা। টাইগ্রিস নদীর পুব দিকে শিয়া অধ্যুষিত এই পাড়াতেই বাস থেকে নেবে গেলেন শেখ হামজা আর আবিদা। আল-রসুল মসজিদের অলিগলিতে সকালের বাজার বসেছে, দোকানির চেয়ে ভিখিরির সংখ্যাই বেশি। স্তুপাক্রিত জঞ্জালের গায়ে চুনোপুঁটি সাজিয়ে হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছে অল্পবয়িসি এক মা আর তার বিকলাঙ্গ সন্তান। শাকসবজির ঠেলার ওপর হামলে পড়েছে বোরখা-চাদর পরা খদ্দেরের দল। .

tejo.scrollstack.com

উনিশ

বাগদাদের রাস্তায় হাঁটছে শবনম। খুলাফা মসজিদ ছাড়িয়ে, জুমুরিয়া স্ট্রিট ধরে বাজারের দিকে। পথেই আল-কিন্দি হাঁসপাতাল, ধর্মগুরু আব্দুল কাদেরের সমাধি। প্যালেস্টাইন হোটেল থেকে দূরত্ব বড়জোর মাইল খানেক, পথচারীরাই বাজারের রাস্তা চিনিয়ে দিয়েছে। ওখানেই ওষুধের দোকান, তেজোর হাতে লেখা চিরকুট সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছে, বড়িগুলো খেয়ে নিলেই দিদির জ্বর নেমে যাবে। .

tejo.scrollstack.com